তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। আপাতত যুদ্ধ বন্ধের কোনো লক্ষণ দেখা না গেলেও কিয়েভ-মস্কো আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলছেন, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার অর্থ হবে ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ’। সোমবার (২১ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন’র সাথে কথা বলার সময় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন রাশিয়ার আগ্রাসনের সমাপ্তি আলোচনায় ব্যর্থ হওয়া মানে ‘তৃতীয় একটি বিশ্বযুদ্ধ’ বেঁধে যাওয়া
রোববার মার্কিন এই সংবাদমাধ্যমকে জেলেনস্কি আরও বলেন, তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে সরাসরি আলোচনা করতে প্রস্তুত। তিনি বিশ্বাস করেন যে আলোচনাই যুদ্ধ বন্ধ করার একমাত্র উপায়।
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির ভাষায়, ‘আমি মনে করি আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে এমন যেকোনো ফরম্যাট, যেকোনো সুযোগ আমাদের ব্যবহার করতে হবে।’
অবশ্য জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি এমন যেকোনো চুক্তি প্রত্যাখ্যান করবেন যেটাতে ইউক্রেনকে রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চলগুলোকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, ইউক্রেন যদি সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য হতো তাহলে এই ‘যুদ্ধ শুরু হতো না’ বলে বিশ্বাস করেন তিনি।
ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘যদি ন্যাটো সদস্যরা আমাদের জোটে দেখতে প্রস্তুত থাকে, তাহলে তারা অবিলম্বে সেটি করবে। কারণ (রাশিয়ার হামলায়) প্রতিদিনই মানুষ মারা যাচ্ছে।’
অবশ্য গত ৭ মার্চ মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য হতে আর ইচ্ছুক নয় ইউক্রেন। একইসঙ্গে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেতস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চল নিয়েও আলোচনায় রাজি হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন তিনি।
দোভাষীর মাধ্যমে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানিয়েছিলেন, তিনি আর ন্যাটোর সদস্য হতে ইচ্ছুক নন। তিনি বুঝে গেছেন, ইউক্রেনকে গ্রহণ করতে ন্যাটো প্রস্তুত নয়। তার ভাষায়, ‘আমি এমন একটা দেশের প্রেসিডেন্ট থাকতে চাই না, যারা হাঁটু গেড়ে ভিক্ষা চায়।’
জেলেনস্কি আরও বলেছিলেন, তিনি বুঝেছেন যে, ন্যাটো রাশিয়াকে ক্ষুব্ধ করবে না। তারা এই বিতর্কিত বিষয়ের মধ্যে ঢুকতে ভয় পাচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে। একসঙ্গে তিন দিক দিয়ে হওয়া এই হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে বৃষ্টির মতো।
সর্বাত্মক হামলা শুরুর পর এক সপ্তাহের মধ্যেই পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির বহু শহর কার্যত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর’র তথ্য অনুযায়ী, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর প্রাণ বাঁচাতে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন ৩০ লাখেরও বেশি ইউক্রেনীয়।