প্রায় ১৫ বছরে হাজারো আইনি জটিলতা জয় করে যুক্তরাষ্ট্রের অভিজাত এক নগরীতে নির্মিত হচ্ছে প্রথম মসজিদ। এ মসজিদের পরিচালনায় রয়েছে বাংলাদেশি আমেরিকান কমিউনিটি।
যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের অভিজাত ট্রয় নগরীর প্রাণকেন্দ্রে গড়ে উঠছে এ মসজিদ। যুক্তরাষ্ট্রের ডিসট্রিক্ট কোর্টের ফেডারেল জাজ ন্যান্সি এডমন্ড সিদ্ধান্তে এক যুগের বেশি সময় অপেক্ষা ও চার বছরের আইনি লড়াইয়ের অবসান ঘটছে।
অ্যাডাম (আদম মসজিদ) মসজিদ ও অ্যাডাম কমিউনিটি সেন্টারের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশি প্রকৌশলী ড. নুরুল আমিন কোর্টের এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, নগরীর প্রথম মসজিদের সঙ্গে থাকতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত।
তিনি জানান, ২০০৭ সালে প্রথম মসজিদের জন্য জমি কিনলেও সিটি থেকে মসজিদ নির্মাণের অনুমতি মেলেনি। ২০১২ সালে তিনিসহ আরও কয়েকজন বাংলাদেশি মিলে ২.৫ মিলিয়ন ডলারে (২১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা) একটি ভবন কেনেন। ২০ হাজার স্কয়ার ফুট ভবনের সব ঠিক থাকলেও জোনিং এর নিয়ম দেখিয়ে মসজিদের আবেদন নাকচ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। ২০১৮ সালে মিশিগান চ্যাপ্টার অব কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশন (কেয়ার মিশিগান) ট্রয় নগরীর বিরুদ্ধে ধর্ম বৈষম্যের অভিযোগ তুলে আড্যাম কমিউনিটি সেন্টারের পক্ষে মামলা দায়ের করে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ট্রয় নগরীতে প্রায় ৪ হাজারের বেশি মুসলিমের বসবাস। ৩৩.৬ স্কয়ার মাইলের এ নগরীতে ৫৩টি ধর্মীয় উপাসনালয় থাকলেও মুসলমানদের জন্য একটা মসজিদ নির্মাণের অনুমতি পাচ্ছে না।
এ মামলার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোর্ট ট্রয় নগরীর বিরুদ্ধে ল’সুট করে জানায় নগরীর জোনিং আইনে মসজিদ নির্মাণে বাধা দেওয়া ফেডারেল (কেন্দ্রীয় সরকার) আইনের পরিপন্থী।
এই মামলার রায়ে জেলা জাজ ন্যান্সি এডমন্ড জানান, জোনিং আইনে মসজিদ নির্মাণে বাধা ধর্মীয় বৈষম্য নয়, তবে সিটির কর্মকর্তারা বা নির্বাচিত কর্তাব্যক্তিরা মসজিদের নির্মাণে কোনো পদক্ষেপ কেন নেননি সে ব্যাপারে জানতে চান। এছাড়া ধর্মীয় উপাসনালয়ে জোনিং আইন আরও শিথিল করার পরামর্শ দেন।
এ ব্যাপারে ট্রয় নগরীর মেয়র ইথার বেকার জানান, তারা কখনই ইসলাম বা মুসলিম বিরোধী নন। নাগরীর জোনিং আইনে নগরবাসীদের সম্পদ রক্ষা রাস্তার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য মসজিদের অনুমতি পায়নি।
কেয়ার মিশিগানের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর দাউদ ওয়ালিদ জানান, কোর্টের এ নির্দেশনায় আনুমানিক ৪ হাজার মুসলমানদের জন্য প্রথম মসজিদ নির্মাণে আর কোনো বাধা থাকল না। বর্তমানে নগরীর মুসলমানরা পার্শ্ববর্তী স্টারলিং হাইট, রচেস্টার হিলস, ও অয়ারেনে গিয়ে নামাজ আদায় করেন।
ড. আমিন জানান, এই অ্যাডাম কমিউনিটি সেন্টারে মসজিদে ৫০০ মেম্বার রয়েছেন। পরবর্তী প্রজন্মকে আমাদের সংস্কৃতি ও ধর্ম শিক্ষা দিতে মসজিদের বিকল্প নেই। অনেকে গাড়ি চালিয়ে অন্য নগরীতে যেতে পারেন না বলে নামাজ আদায় করতে পারেন না। এই মসজিদ বয়স্ক ও বাচ্চাদের জন্য নামাজ আদায়ের বড় সুযোগ তৈরি করবে।
অ্যাডাম কমিউনিটি মসজিদের পক্ষে কেয়ার মিশিগানের আইনজীবী এমি ডৌকৌর জানান, জেলা জাজের এই নির্দেশনায় নগরীর মুসল্লিরা এই মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারবেন। আগামী রমজানের পবিত্র ৩০ দিনই এখানে নামাজ হবে।
তিনি জানান, ল’সুট এখনো একটিভ, ১৮ এপ্রিল পরবর্তী শুনানিতে ট্রয় সিটি ও অ্যাডাম কমিউনিটি মসজিদের মামলার সুরাহা হবে বলে আশা করা যায়।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে মিশিগান রাজ্যে সবচেয়ে বেশি মুসলমানের বসবাস। বাংলা টাউন (হ্যামট্রামিক) এ মাইকে আজান হয়। এ বাংলা টাউনে মসজিদের সংখ্যা ৭টি। এই শহরের মেয়র কাউন্সিলরসহ সকল নির্বাচিত কর্তাব্যক্তি মুসলমান। কেন্দ্রীয় সরকারের কংগ্রেস ম্যান মুসলমান নারী রাশিদা তালিবও মিশিগানের।
সংলাপ-২৬/০৩/০০৫/আ/আ