ইউক্রেনে বসবাসরত বাংলাদেশি ও ভারতীয়রা নানা প্রতিকুলতা পেরিয়ে পোল্যান্ড সীমান্তে প্রবেশ করেছেন। বেশ কয়েকজন সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার অভিজ্ঞা জানিয়েছেন।
ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী শহর শেমিসেলের রেল স্টেশন এলাকায় মাথা গোজার ঠাই নেই। ইউক্রেন সীমান্ত পেরিয়ে আসা অভিবাসীরা তীব্র ঠান্ডা থেকে বাঁচতে সেখানে নিয়েছেন আশ্রয়। ইউক্রেনের নাগরিকদের সাথে অন্যান্য দেশের নাগরিকরাও রয়েছেন। তাদেরই একজন আরিফ চৌধুরী। তখন রেল স্টেশনটিতে ডয়চে ভেলের সাংবাদিককে বলেন, আমরা ১৩ জন প্রবেশ করেছি। তাদের মধ্যে ৬ জন মহিলা, দুইজন শিশু ও বাকিরা শিক্ষার্থী ছিল তারা পার হতে পারেননি। তাদের জন্য অপেক্ষা করছি।
নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে আরিফ বলেন, দীর্ঘ যাত্রা ছিল। আমার নতুন জন্ম হয়েছে। মৃত্যু যে কত কাছ থেকে দেখেছি, মৃত্যু যে কত প্রকার হতে পারে, সেটা এই পরিস্থিতিতে না গেলে বলে বোঝানো সম্ভব না। আমরা ঠিক এমন পরিস্থিতি দেখে আসছি। ঘুমিয়ে গেছি এর মধ্যেই বোমা বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছি৷ রাশিয়া বাড়ি ঘরে হামলা শুরু করেছে। বাসা বাড়িতে ঢুকে গুলি করছে। যার জন্যই সেখান থেকে চলে আসতে বাধ্য হয়েছি।
আরিফ আরও বলেন, পোল্যান্ডে বাংলাদেশের দূতাবাসের কাছ থেকে তারা সহায়তা পাচ্ছেন। ইউক্রেনে বাংলাদেশের কনস্যুলারও তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন। ইউক্রেন সীমান্তে নানা সংকট হলেও পোল্যান্ডে ঢুকতে তাদের কোনো সমস্যা হয়নি।
দেশটি বিনা টিকিটে অভিবাসীদের সীমান্ত এলাকা থেকে গণপরিবহনে যাতায়াতের সুযোগ দিচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবীরাও নানাভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। এছাড়াও স্থানীয় অনেকে অভিবাসীদের থাকার জায়গা করে দিচ্ছেন।
আরেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আবু বকর বলেন, আমি কিয়েভে থাকতাম। ওখানকার পরিস্থিতি খুব খারাপ ছিল। জীবনের নিরাপত্তার জন্য দূতাবাসে যোগাযোগ করি। আমার পাসপোর্ট ডকুমেন্ট সব আছে। তখন ওরা (পোল্যান্ড) আমাদের ১৫ দিনের ট্রাভেলিং ভিসা দিয়ে দিয়েছে।
জানা গেছে, ইউক্রেন থেকে পালিয়ে আসা মানুষের ঢলের কারণে দেশটির বিভিন্ন সীমান্তে তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে। যার কারণে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার হেঁটে পোল্যান্ডে প্রবেশ করতে হচ্ছে তাদের। মেডিকা সীমান্ত দিয়ে পোল্যান্ডে আসা বাংলাদেশের মোশাররফ হোসেনও এমন অভিজ্ঞতার কথা জানান। তিনি বিভিন্ন দেশের প্রায় ২০০ অভিবাসীর সঙ্গে সোমবার সন্ধ্যায় সীমান্ত অতিক্রম করেন।
সেখানে আরেক বাংলাদেশি শেখ নাসের উদ্দিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ইউক্রেনীয়দের আলাদা লাইনে ইমিগ্রেশনে নেওয়া হয়। সেখানে তাদের ডকুমেন্টও পরীক্ষা করা হয় না। আমরা যারা বিদেশি আছি তাদের আলাদাভাবে ডকুমেন্ট পরীক্ষা করা হয়। সীমান্তে খুবই ভোগান্তি। আমি ছয় দিন ছয় রাত থেকে..খাওয়া দাওয়া ঘুম নাই, ঠান্ডার মধ্যে থেকে এসেছি। এই ছয়দিন রাস্তাতেই ছিলাম লাবিব সীমান্তের অংশটুকুতে। উন্মুক্ত জায়গায় ছিলাম।
শুধু বাংলাদেশি নন এমন দুর্ভোগের বর্ণনা দিয়েছেন মেডিকায় পৌঁছানো ভারতীয় শিক্ষার্থী শীতল। তিনি বলেন, সীমান্ত অতিক্রমে ৩৫ থেকে ৪০ কিলোমিটার হাঁটতে হয়েছে। ভারি ব্যাগ নিয়ে আসাটা ছিল খুবই কষ্টকর। আমি হাঁটতেও পারছিলাম না ঠিকমতো।
সীমান্তে ইউক্রেনীয় নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে কয়েকজন ভারতীয় মারধরের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শীতল সেখানে ছিলেন বলে জানান। তিনি দাবি করেন, অভিবাসীরা অধৈর্য্য হয়ে ওঠার কারণে এক পর্যায়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়। এমন অবস্থায় নিরাপত্তকর্মীরাও তাদের দায়িত্ব পালন করেন।
রোববার পোল্যান্ডে নিয়োজিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, স্থানীয় সময় বিকেল পর্যন্ত চারশ বাংলাদেশি পোল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছেন। যা গত দুইদিন থেকে আরও বেড়েছে। পূর্ব ইউরোপের দেশ ইউক্রেনে ঠিক কতজন বাংলাদেশি বাস করেন তার সঠিক হিসেব জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এ সংখ্যা প্রায় দেড় হাজারের মতো হতে পারে।